বিবাহ করো ২টি, ৩টি, ৪টি করে অথবা ১টি করো যদি তুমি আশঙ্কা কর যে সমতা করতে পারবে না
কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিবাহ হল সামাজিক, নৈতিক ও ধর্মীয় জীবনকে সুসংহত করার একটি প্রধান মাধ্যম। আল্লহর নির্দেশ অনুযায়ী একজন মুসলিম পুরুষ একাধিক বিবাহ করতে পারবে, তবে সমতার ন্যায্যতা মেনে চলা আবশ্যক। যদি ন্যায্যতা রক্ষা করা সম্ভব না হয়, তবে একটি বিবাহ করাই উত্তম।
সন্তানের বয়স হওয়ার সাথে সাথে পিতা-মাতার দায়িত্ব তাদেরকে উপযুক্ত পাত্র-পাত্রীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করা, তাদেরকে সামলম্বী হওয়ার জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা, এবং সন্তান নিজের উপার্জনে বিবাহ করবে সেই প্রত্যাশায় বয়স অতিরিক্ত করে তাদেরকে পরোক্ষভাবে উৎসাহিত করা চরম জাহালাত। বিবাহের মূল উদ্দেশ্যে আল্লহ পছন্দ করেন যেন তাঁর বান্দা একাকী জীবনে না থাকেন, বরং আনন্দ উচ্ছল জীবন যাপন করেন।
কুরআনের আলোকে বিবাহ
- সূরহ্ আন-নিসা (4:3): একাধিক বিবাহ করা যাবে, কিন্তু স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রাখার নির্দেশ।
- সূরহ্ আন-নিসা (4:19, 35): বিবাহ-বিচ্ছেদ ও সালিশের নির্দেশনা।
- সূরহ্ আল-বাকরহ (2:233): সন্তান এবং স্ত্রীর অধিকার রক্ষা করা, খাদ্য, বাসস্থান ও যত্ন নিশ্চিত করা।
- সূরহ আলি-ইমরন (3:19): সামাজিক সম্পর্ক ও বিবাহ-সংক্রান্ত নির্দেশনা।
- সূরহ্ আত-তাহরীম (66:1–5): সতর্কতা ও স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক বিষয়ক বিধান।
- সূরহ্ আত-তলাক্ব (65:1–12): চূড়ান্ত বিবাহ ও সম্পর্কের দায়িত্ব, ইদ্দত, সমতা।
- সূরহ্ আল-আহযাব (33:49): বিবাহের পরবর্তী বিধান।
- সূরহ্ আল-মুজাদিলা (58:2–4): ইলা ও জিহার সম্পর্কিত বিধান, বিবাহ সংক্রান্ত।
- সূরহ্ আল-হাদীদ (57:20): পারিবারিক সম্পর্ক ও সামাজিক দায়িত্বের গুরুত্ব।
নবীর (সা.) নির্দেশনা
- যদি একজন পুরুষ সমতা রাখতে না পারে, তাহলে একমাত্র স্ত্রীই যথেষ্ট।
- সাহাবাদের জীবনে দেখা যায়, সমতা রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে শুধুমাত্র একমাত্র স্ত্রী নিয়মিত রাখা উত্তম।
উপসংহার: বিবাহ শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আনন্দের জন্য নয়, বরং সামাজিক স্থিতিশীলতা, সন্তানদের কল্যাণ ও নৈতিক দায়িত্ব নিশ্চিত করার জন্য। সমতা রক্ষা সম্ভব না হলে একমাত্র বিবাহ করাই উত্তম। আল্লহর বিধান মানবতার কল্যাণে প্রযোজ্য এবং এটি সুসংগঠিত পরিবার গঠনে সাহায্য করে।
বিবাহ সম্পর্কিত ২৫টি গুরুত্বপূর্ণ সাধারন জিজ্ঞাসা (FAQ)
“তোমরা তাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হও, যাতে তোমরা শান্তি পাও এবং পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি হয়।” (সূরহ্ আর-রূম 30:21)
সুতরাং বিবাহ কেবল জৈবিক চাহিদা নয়, বরং পারিবারিক স্থিতিশীলতা, স্নেহ-মমতা ও মানবতার কল্যাণের মাধ্যম।
“তোমরা পছন্দমতো দুই, তিন বা চারজন নারীকে বিয়ে করতে পারো। তবে যদি আশঙ্কা কর যে, তাদের মাঝে সমতা রক্ষা করতে পারবে না, তবে একটিই যথেষ্ট।” (সূরহ্ আন-নিসা 4:3)
অর্থাৎ সর্বোচ্চ চারজন পর্যন্ত বৈধ, তবে ন্যায়-সমতা শর্তসাপেক্ষ।
“আর নারীদেরকে তাদের মহর আনন্দের সাথে প্রদান কর।” (সূরহ্ আন-নিসা 4:4)
মেহর হলো স্ত্রীর সম্মান ও নিরাপত্তার প্রতীক। এটি স্বামীর দায়িত্ব, স্ত্রীর জন্য একটি অধিকার।
“অভিভাবক ছাড়া কোন নারীর নিকাহ বৈধ নয়।” (আবু দাউদ 2085, তিরমিজি 1101)
অর্থাৎ অভিভাবকের সম্মতি ছাড়া নিকাহ বৈধ নয়।
“কোন কুমারী মেয়ের অনুমতি ছাড়া তাকে বিয়ে দেওয়া যাবে না।” (বুখারি 5136, মুসলিম 1419)
সুতরাং জোরপূর্বক বিয়ে ইসলামে বাতিল।
“তোমরা মুশরিক পুরুষদেরকে (তোমাদের) নারীদের বিয়ে দিও না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে।” (সূরহ্ আল-বাকারাহ 2:221)
সুতরাং মুসলিম নারীর জন্য অমুসলিম পুরুষ বৈধ নয়।
(বুখারি 5115, মুসলিম 1406)
সুতরাং নিকাহ মুত‘আ হারাম।
(আবু দাউদ 2118, তিরমিজি 1105)
এটি বিয়েকে ইবাদত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
“তোমরা যখন লেনদেন কর, তখন তা লিখে নাও।” (সূরহ্ আল-বাকারাহ 2:282)
যদিও নিকাহের জন্য সাক্ষী আবশ্যক, লিখিত দলিল (রেজিস্ট্রেশন) সামাজিক সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
“তাদের অধিকার যেমন, তাদের উপর দায়িত্বও তেমনি।” (সূরহ্ আল-বাকারাহ 2:228)
স্বামী ভরণপোষণ ও নিরাপত্তা দেবে, স্ত্রী আনুগত্য, গৃহ রক্ষা ও সন্তান লালন করবে।
“তোমরা স্ত্রীদের মধ্যে ন্যায্যতা বজায় রাখতে সক্ষম হবে না, যতই চেষ্টা কর।” (সূরহ্ আন-নিসা 4:129)
এবং রাসূল ﷺ বলেছেন:
“যার দুই স্ত্রী আছে এবং সে একদিকে ঝুঁকে থাকে, কিয়ামতের দিনে তার দেহ কুঁজো অবস্থায় আসবে।” (আবু দাউদ 2133, তিরমিজি 1141)
“তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত, তাদেরকে বিয়ে করিয়ে দাও… যদি তারা দরিদ্র হয়, তবে আল্লহ নিজ অনুগ্রহে তাদের ধনী বানাবেন।” (সূরহ্ আন-নূর 24:32)
“কোনো নিকাহ বৈধ নয়, যতক্ষণ না তা দুইজন সাক্ষী দ্বারা সম্পাদিত হয়।” (ইবনে হিব্বান 4075, হাকিম 2/183)
সুতরাং সাক্ষী ছাড়া নিকাহ শূন্য।
“তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও; এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া স্থাপন করেছেন।” (সূরহ্ আর-রূম 30:21)
তবে শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা না হলে অভিভাবকের দায়িত্ব বিবাহ বিলম্বিত করা।
“পুরুষরা নারীদের অভিভাবক, কারণ আল্লহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং তারা তাদের সম্পদ ব্যয় করে।” (সূরহ্ আন-নিসা 4:34)
সুতরাং ভরণপোষণ স্বামীর মূল দায়িত্ব।
“পুরুষদের জন্য তাদের উপার্জনের অংশ রয়েছে এবং নারীদের জন্য তাদের উপার্জনের অংশ রয়েছে।” (সূরহ্ আন-নিসা 4:32)
অর্থাৎ স্ত্রীর সম্পদ তার নিজস্ব, স্বামী অনুমতি ছাড়া তা নিতে পারে না।
“যদি তোমরা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতবিরোধ আশঙ্কা কর, তবে তাদের উভয়ের পরিবার থেকে একজন সালিশ আন।” (সূরহ্ আন-নিসা 4:35)
অর্থাৎ শান্তিপূর্ণ সালিশই সমাধান।
“যখন কেউ তোমাদের কাছে আসে, যার দ্বীন ও চরিত্রে সন্তুষ্ট, তবে তাকে বিয়ে দাও।” (তিরমিজি 1084)
দেরি করলে সমাজে ফিতনা ও ব্যভিচার ছড়ায়।
“তোমাদের মধ্যে উত্তম সে-ই, যে তার স্ত্রীর সাথে উত্তম আচরণ করে।” (তিরমিজি 3895, ইবনে মাজাহ 1977)
“তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে আহলুল কিতাবদের পবিত্র নারীগণ।” (সূরহ্ আল-মায়িদাহ 5:5)
তবে শর্ত হলো: তারা পবিত্র ও শালীন হতে হবে।
“বিবাহ আমার সুন্নত। যে আমার সুন্নত থেকে বিমুখ হয়, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।” (বুখারি 5063, মুসলিম 1401)
“হে আল্লহর রাসূল! কেউ তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হলে কি সওয়াব পাবে?”
তিনি বললেন: “তোমরা যদি হারাম করো তবে গুনাহ হতো, তাহলে হালালে করলে সওয়াব পাবেই।” (মুসলিম 1006)
“যখন একজন মানুষ বিবাহ করে, তখন সে তার অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ করে। এরপর সে বাকি অর্ধেক বিষয়ে আল্লহকে ভয় করুক।” (বায়হাকি, শু‘আবুল ঈমান 5486)
One thought on “বিবাহ করো ২টি, ৩টি, ৪টি করে অথবা ১টি করো যদি তুমি আশঙ্কা কর যে সমতা করতে পারবে না”