আল্লহর বিধান মানবাতার কল্যাণে কুরআন থেকে শিক্ষা গ্রহন জিজ্ঞাসা জীবন জিজ্ঞাসা সমস্যা ও সমাধান সুন্নাতি লাইফস্টাইল

তলাক্ব সর্বোচ্চ ২ কিস্তিতে বৈধ, তৃতীয়বারে স্থায়ী বিচ্ছেদ অপরিহার্য – আল্লহর বিধান মানবতার কল্যাণে!

কুরআন ও হাদিসের আলোকে তলাক্বের বিধান

ইসলাম তালাককে একটি চরম প্রয়োজনে বৈধ করেছে। এটি খেলনা নয়, বরং আল্লহর বিধান মেনে চলা কঠিন হয়ে গেলে কেবল তখনই বৈধ। কুরআন ও হাদিসে তলাক্ব সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। নীচে ধাপে ধাপে তুলে ধরা হলো।

তলাক্ব সম্পর্কিত আলোচনা কুরআনের বিভিন্ন সূরায়:

সম্পূর্ণ একটি সূরহ (আত-তলাক্ব) সহ মোট ৮টি সূরায় তলাক্ব প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে:

  • ১. সূরহ্ আল-আহযাব (33:49):বিবাহের পরবর্তী বিধান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
  • ২. সূরহ্ আল-বাকারাহ (2:226–242):তলাক্বের প্রক্রিয়া, ইদ্দত, পুনর্বিবাহ ইত্যাদি।
  • ৩. সূরহ্ আল-ইমরান (3:19): সামাজিক সম্পর্ক ও তলাক্ব প্রসঙ্গ আলোচনা করা হয়েছে।
  • ৪. সূরহ্ আন-নিসা (4:19, 35): বিবাহ-বিচ্ছেদ ও সালিশের বিষয়ে আলোচনা রয়েছে।
  • ৫. সূরহ্ আল-মুজাদিলা (58:2–4): ইলা ও জিহার সম্পর্কিত বিধান, যা তলাক্বের সাথে সম্পর্কিত।
  • ৬. সূরহ্ আত-তাহরীম (66:1–5): সতর্কতা ও বিধান, স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
  • ৭. সূরহ্ আত-তলাক্ব (65:1–12):সূরাটি তলাক্ব সম্পর্কিত বিধান নিয়ে নাযিল হয়েছে।
  • ৮. সূরহ্ আল-হাদীদ (57:20): পারিবারিক সম্পর্কের গুরুত্ব, যা পরোক্ষভাবে তলাক্বের সাথে সম্পর্কিত।
👉 এগুলো অধ্যয়ণ করলে সহজেই বোঝা যায়, তলাক্ক কোনো হালকা খেলা নয়, বরং আল্লহ নির্ধারিত সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া।

ধাপ ১: ইলা (কসম)

স্বামী যদি কসম করে যে স্ত্রীর কাছে যাবে না:

  • সময় নির্ধারিত থাকলে (৪ মাসের কম) → সময় শেষ হওয়ার আগে মিলিত হলে কাফফারা দিতে হবে।
  • সময় নির্ধারিত না থাকলে → সর্বোচ্চ সময়সীমা ৪ মাস। এরপরও মিলিত না হলে অবশ্যই তলাক্ব দিতে হবে।
(সূরহ্ আল-বাকারা 2:226-227)

ধাপ ২: প্রথম তালাক

একবার তলাক্ব দিলে স্ত্রী ৩ ঋতু ইদ্দত পালন করবে।

  • এই সময় স্ত্রী স্বামীর ঘরেই থাকবে।
  • খরচ ও নিরাপত্তার দায়িত্ব স্বামীর।
  • ইদ্দতের ভেতরে মিলন হলে নতুন বিয়ে লাগবে না।
  • ইদ্দতের পর মিলন চাইলে নতুন করে বিবাহ করতে হবে।
(সূরহ্ আল-বাকারা 2:228)

ধাপ ৩: দ্বিতীয় তালাক

আবার তলাক্ব হলে একই নিয়ম কার্যকর হবে।

  • ইদ্দতের ভেতরে মিলিত হলে সংসার চলতে থাকবে।
  • ইদ্দতের পরে চাইলে নতুন বিয়ে করে সংসার করা যাবে।
(সূরহ্ আল-বাকারা 2:229)

ধাপ ৪: তৃতীয় তলাক্ব (চূড়ান্ত)

তৃতীয় তলাক্বের পর স্থায়ী বিচ্ছেদ।

  • এবার স্ত্রী আর স্বামীর কাছে ফিরতে পারবে না।
  • অন্যত্র স্বাভাবিকভাবে বিয়ে করলে, এবং সেখান থেকে তলাক্ব বা স্বামীর মৃত্যু হলে → পুনরায় আগের স্বামীর সাথে বিবাহ করতে পারবে।
(সূরহ্ আল-বাকারা 2:230)

ধাপ ৫: স্বামীর মৃত্যু

স্বামী মারা গেলে স্ত্রীকে ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে। এর আগে কারো সাথে বিয়ের চুক্তি করা যাবে না। (সূরহ্ আল-বাকারা 2:234)

তলাক্ব সম্পর্কিত সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)

তলাক্ব কোনো খেলা নয়। এটি তখনই বৈধ যখন স্বামী-স্ত্রী আল্লহর সীমা লঙ্ঘন না করে একসাথে বসবাস করতে অক্ষম হয়। (সূরহ্ আল-বাকারা 2:229)

একসাথে তিন তলাক্ব দেয়া কুরআন ও সুন্নাহর বিরোধী। এটি বিদআত তালাক। ইসলামে একবারে একটি তলাক্বের বিধান রয়েছে।

স্ত্রীকে ইদ্দতের সময় স্বামীর ঘরেই থাকতে হবে। খরচ বহন ও নিরাপত্তার দায়িত্ব স্বামীর। (সূরহ্ আল-বাকারা 2:231)

তালাকপ্রাপ্ত নারীর ইদ্দত হলো ৩ ঋতু (মাসিক চক্র)। স্বামীর মৃত্যুতে ইদ্দত হলো ৪ মাস ১০ দিন। (সূরহ্ আল-বাকারা 2:228, 234)

ইদ্দতের সময় খরচ বহন ও থাকার দায়িত্ব স্বামীর উপর। (সূরহ্ আল-বাকারা 2:233)

ইদ্দতের ভেতরে মিলিত হলে নতুন বিয়ে লাগবে না। তবে ইদ্দতের পর মিলিত হতে চাইলে নতুন করে বিবাহ করতে হবে।

না, তৃতীয় তলাক্বের পর স্থায়ী বিচ্ছেদ ঘটে। তবে স্ত্রী অন্যত্র স্বাভাবিকভাবে বিয়ে করলে এবং সেখানে তলাক্ব বা স্বামী মারা গেলে পুনরায় আগের স্বামীর সাথে বিয়ে সম্ভব। (সূরহ্ আল-বাকারা 2:230)

স্বামী মারা গেলে স্ত্রীকে ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে। এর আগে অন্যত্র বিয়ে করা যাবে না। (সূরহ্ আল-বাকারা 2:234)

হ্যাঁ, কুরআনে তলাক্বের সময় সাক্ষী রাখার নির্দেশনা রয়েছে। (সূরহ্ আত-তলাক্ব 65:2)

তলাক্ব দিতে হবে স্ত্রীর পবিত্র সময়ে (ঋতু ছাড়া সময়ে) এবং একবারে একটি তালাক। এরপর স্ত্রীকে ইদ্দত পালনে রাখা হবে।

রাগের মাথায় তলাক্ব দেয়া ঠিক নয়। তবে যদি বোধশক্তি স্বাভাবিক থাকে এবং স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করা হয় তাহলে তলাক্ব কার্যকর হবে।

হ্যাঁ, লিখিত তালাকও কার্যকর। তবে সাক্ষীর উপস্থিতি থাকা উত্তম। (সূরহ্ আত-তলাক্ব 65:2)

স্ত্রী সরাসরি তলাক্ব দিতে পারে না। তবে খুলা এর মাধ্যমে তলাক্ব চাইতে পারে, যেখানে স্ত্রী দেনমোহর বা কিছু ফেরত দিয়ে বিচ্ছেদ নেবে। (সূরহ্ আল-বাকারা 2:229)

তলাক্ব দেয় স্বামী, আর খুলা হয় স্ত্রীর আবেদনে, যেখানে স্ত্রী দেনমোহর বা মাল ফেরত দেয়। দুটোতেই বৈবাহিক সম্পর্ক শেষ হয়।

না, ইদ্দতের সময় বিয়ে বা গোপন চুক্তি বৈধ নয়। তবে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে প্রস্তাব দেয়া যেতে পারে। (সূরহ্ আল-বাকারা 2:235)

গর্ভবতী স্ত্রীর ইদ্দত হলো সন্তানের জন্ম পর্যন্ত। এই সময়ের খরচ বহন স্বামীর উপর ফরজ। (সূরহ্ আত-তলাক্ব 65:4,6)

ইদ্দতের সময় ভরণ-পোষণ, বাসস্থান, নিরাপত্তা – সবকিছুর দায়িত্ব স্বামীর। (সূরহ্ আল-বাকারা 2:241)

তলাক্বের জন্য ইমামের অনুমতি প্রয়োজন নেই। তবে শালীনতা রক্ষায় সালাহ ও সাক্ষীর সামনে করা উত্তম।

হ্যাঁ, ফোনে বা লিখিত মেসেজে স্পষ্টভাবে দিলে তা কার্যকর হবে, যদি উদ্দেশ্য তলাক্ব হয়।

না, জোরপূর্বক বা বাধ্য করে দেয়া তলাক্ব ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়। স্বামীকে সচেতনভাবে উচ্চারণ করতে হবে।

হ্যাঁ, নবী ﷺ বলেছেন: “তিনটি বিষয় মজা হোক বা সিরিয়াস – উভয় ক্ষেত্রেই কার্যকর: বিয়ে, তালাক, এবং মুক্তি।” (আবু দাউদ)

সন্তানের ভরণ-পোষণ ও খরচের দায়িত্ব বাবার উপর। তবে লালন-পালন মায়ের কাছে থাকবে যদি সে যোগ্য হয়।

হ্যাঁ, ভাষা যাই হোক, যদি অর্থ স্পষ্ট হয় এবং উদ্দেশ্য তলাক্ব হয় তবে কার্যকর হবে।

হ্যাঁ, কুরআনে নির্দেশ আছে উভয় পরিবারের প্রতিনিধি নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করতে। (সূরহ্ আন-নিসা 4:35)

হ্যাঁ, নবী ﷺ বলেছেন: “আল্লহর নিকট সবচেয়ে অপছন্দনীয় হালাল বিষয় হলো তালাক।” (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)

👉দীন প্রচারে অংশ নিন, শেয়ার করুনঃ

One thought on “তলাক্ব সর্বোচ্চ ২ কিস্তিতে বৈধ, তৃতীয়বারে স্থায়ী বিচ্ছেদ অপরিহার্য – আল্লহর বিধান মানবতার কল্যাণে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *