‘আলহামদুলিল্লাহ’ এর মর্মার্থ ও দার্শনিক দিক
মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই সৌজন্যপ্রবণ এবং নৈতিকতা বোধসম্পন্ন। কুরআনে বলা হয়েছে, আমাদের ভেতরে ফিতরাহ বা স্বাভাবিক ভালোবাসা ও শালীনতার প্রবণতা রয়েছে। একজন ভদ্র মানুষ সুন্দর কিছু দেখলে তার প্রশংসা করে এবং উপকারের জন্য ধন্যবাদ জানায়।
‘আলহামদুলিল্লাহ’ শব্দের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়েছে: কৃতজ্ঞতা (শুধুমাত্র আল্লহর জন্য) এবং প্রশংসা (আল্লহর জন্য)। এই দুটি আলাদা বিষয় হলেও আমরা যখন ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলি, আমরা উভয়ই প্রকাশ করি।
কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসার পার্থক্য
আপনি যখন কোনো সুন্দর জিনিস দেখেন যেমন একটি বাড়ি, আপনি তাকে প্রশংসা করতে পারেন কিন্তু ধন্যবাদ জানাবেন না। আবার কারো উপকারে আপনি ধন্যবাদ জানালেও হয়তো তাকে প্রশংসা করবেন না। ইসলামে আল্লহ আমাদের শেখান সব সময় কৃতজ্ঞ থাকতে, এমনকি এমন মানুষের ক্ষেত্রেও যারা মুশরিক বা বিরোধী হলেও। যেমন, মুসা (আ) ফিরাউনকে তার উপকারের জন্য ধন্যবাদ দিয়েছেন, যদিও তিনি ফিরাউনের প্রশংসা করেননি।
আলহামদুলিল্লাহ এর প্রকৃত অর্থ
‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতে বোঝানো হয় আল্লহর প্রতি পূর্ণ প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা, যা তিনি যা করেন তার জন্য। এটি শুধুমাত্র ভালো সময়ের জন্য নয়, বরং জীবনের সব অবস্থার জন্য। মুসলিম হিসেবে আমাদের মনোভাব হওয়া উচিত সবকিছুর মধ্যে আল্লহর রহমত ও কৃপা খুঁজে পাওয়া, হতাশার পরিবর্তে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখা।
যেমন কেউ গরমে অসন্তুষ্ট, তখনও বলা উচিত ‘আলহামদুলিল্লাহ’ কারণ গরম থাকা স্বাস্থ্যসম্মত থাকার একটি লক্ষণ। আমাদের উচিত জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই আল্লহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা।
আলহামদুলিল্লাহ এর ব্যবহার ও সতর্কতা
অনেকে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ শব্দটি ব্যবহার করেন, কিন্তু কখনো তা বুঝে না বা অভিযোগ প্রকাশের জন্য ব্যবহার করেন। প্রকৃত ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতে হলে অন্তরের গভীরে থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হয়। আপনি যখন সত্যিকারের ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতে পারেন, তখন হতাশা ও অভিযোগ থেকে মুক্ত থাকেন। একজন প্রকৃত মুসলিম কখনো হতাশ হতে পারেন না, কারণ তার মন সব সময় আল্লহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ও কৃতজ্ঞতায় পরিপূর্ণ।
সমাজে ইতিবাচক মনোভাব
বর্তমান সময়ে আমরা মাঝে মাঝে মুসলিম উম্মাহর দুরবস্থা নিয়ে অভিযোগ করি। তবে আমাদের করণীয় হলো অভিযোগের পরিবর্তে আল্লহর কাছে ফিরে যাওয়া এবং সবসময় ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করা। আল্লহই আমাদের অবস্থার পরিবর্তনকারী, তাই আমাদের বিশ্বাস ও ধৈর্য্য ধরে এগিয়ে যেতে হবে।