নিরাপদ জীবনের মূল ভিত্তি

সলাত: সাহায্য প্রাপ্তির সর্বোত্তম সুযোগ

সলাত হলো বিশ্বস্ত মানুষের পরিচয়। এর মাধ্যমে সে স্রষ্টার সাথে সংযুক্ত হয়, সাহায্য চায়, আত্মশুদ্ধি অর্জন করে। সলাত ত্যাগ শুধু দুনিয়াতে অপমান নয়, বরং (মৃত্যু পরবর্তী) অনন্ত জীবনে চরম শাস্তি ও বিপর্যয়ের কারণ।

সলাত: সাহায্য প্রাপ্তির সর্বোত্তম সুযোগ

সলাত হলো ঈমানদারের শ্রেষ্ঠ শক্তি ও আল্লহর নৈকট্য লাভের পথ

ফরজ সলাত: ঈমানদারের উপর আবশ্যক

আল্লহ ﷻ বলেন:

﴾ إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا ﴿

সূরহ্ আন-নিসা: ১০৩ — “নিশ্চয়ই সলাত মুমিনদের উপর নির্ধারিত সময়ে ফরজ করা হয়েছে।”
  • ফরজ সলাতের সংখ্যা: দৈনিক ৫বার [১. ফাজর ২-রকাআত, ২. যোহর ৪-রকাআ’ত/জুমুআহ ২-রকাআ’ত, ৩. আসর ৪-রকাআ’ত, মাগরিব ৩-রকাআ’ত, ই’শা ৪-রকাআ’ত]
  • প্রত্যেকটি সলাত নির্দিষ্ট সময় ও নিয়মে আদায় করা বাধ্যতামূলক
সলাতের সময় ও সর্বোত্তম ওয়াক্ত
  • ফজর: সুবহি সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত — শ্রেষ্ঠ সময়: শুরুতেই
  • যোহর: সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে আসরের পূর্ব পর্যন্ত
  • আসর: মধ্য বিকাল থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত
  • মাগরিব: সূর্য অস্ত যাওয়ার পর থেকে অল্প সময়
  • এশা: সন্ধ্যা অন্ধকার থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত

নবী ﷺ সর্বদা ওয়াক্তের শুরুতেই সলাত আদায় করতেন, তা সর্বোত্তম।

সলাতের সুন্নাতি পদ্ধতি

রাসূল ﷺ বলেন: “তোমরা আমার দেখার মতো সলাত আদায় কর।” — সহীহ বুখারী

  1. তাহারাত ও ওযু করে কিবলার দিকে দাঁড়ানো
  2. নিয়্যত করা (হৃদয়ে)
  3. তাকবীর (الله أكبر) ও হাত বাঁধা
  4. সূরহ্ ফাতিহা ও অন্য সূরহ্ পাঠ
  5. রুকু > সামা’আল্লহু > সিজদাহ > বৈঠক > দ্বিতীয় সিজদা
  6. দ্বিতীয় রাকাআতে একইভাবে > তাহিয়্যাত > সালাম
সলাত মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে

﴿إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ﴾

সূরহ্ আনকাবুত: ৪৫

আল্লহ তা’আলা জানিয়ে দিয়েছেন, যথাযথ সলাত মানুষকে অশ্লীলতা ও গুনাহ থেকে রক্ষা করে।

সুন্নাত ও নফল সলাতের গুরুত্ব

সুন্নাতে মোয়াক্কাদা সলাত: ফরজের আগে/পরে রাসূল ﷺ নিয়মিত আদায় করতেন

  • ফজরের পূর্বে ২ রাকাআত — রাসূল ﷺ বলেন: “এই ২ রাকাআত দুনিয়া ও যা কিছু তাতে আছে তার চেয়ে উত্তম” — মুসলিম
  • যোহরের আগে ৪ ও পরে ২
  • মাগরিবের পরে ২, এশার পরে ২

নফল সলাত: তাহাজ্জুদ, দুহা, তাওবা, হায়াতুল মওত ইত্যাদি

আল্লহর সাহায্য লাভের পথ: সলাত ও ধৈর্য

﴿وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ﴾

সূরহ্ বাকারা: ৪৫ — “তোমরা ধৈর্য ও সলাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর।”

সত্যিকারের সাহার্য ও পরিবর্তন আসে কেবল সলাতের মাধ্যমে আল্লহর সামনে নত হওয়ার মধ্য দিয়ে।

সলাত বর্জনকারীর পরিণতি (اللجنة الدائمة)
  • স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড (3/370): “ইচ্ছাকৃতভাবে সলাত ত্যাগকারী কাফের, ইসলামের গন্ডির বাইরে।”
  • হাদীস: “আমাদের ও কাফেরদের মাঝে পার্থক্য সলাত, যে তা ত্যাগ করে, সে কুফরী করল।” — তিরমিযী
  • সূরহ্ মুদ্দাসসির ৪২-৪৩ আয়াতে জাহান্নামীদের প্রথম অপরাধ বলা হয়েছে — সলাত না পড়া
উপসংহার:

সলাত হলো মুমিনের পরিচয়। এর মাধ্যমে সে আল্লহর সাথে সংযুক্ত হয়, সাহায্য চায়, আত্মশুদ্ধি অর্জন করে। সলাত ত্যাগ শুধু দুনিয়াতে অপমান নয়, বরং আখিরাতেও চরম শাস্তির কারণ।

আল্লহ আমাদের সলাতের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন এবং এর মাধ্যমে আমাদের কবুল করুন। আমীন।

👉দীন প্রচারে অংশ নিন, শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *